আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে দোকান বন্ধের নির্ধারিত সময় পার করায় এক দোকানিকে জরিমানা করেন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান। হাসেম আলী নামে ওই ব্যবসায়ী উল্টো মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে ‘হুমকি-ধামকি’ ও ‘জোর করে’ জরিমানা করার অভিযোগ তুলে নিজেই এখন লাপাত্তা। হাসেম আলীর দেখা করতে গত ৩দিন ধরে একাধিক বার তার বাড়ি গেলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগকারীর স্ত্রী বলেন, ইউএনও স্যারের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তার স্বামীর। আমি ও আমার স্বামী বিষয়টি মিমাংশা চাই। সম্প্রতি সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেন বরাবর এ অভিযোগ দেন ওই ব্যবসায়ী হাসেম আলী। তিনি পাটগ্রাম উপজেলার রসুলগঞ্জের ৭নং পৌর কোটতলী এলাকার বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২১ জুন সরকার ঘোষিত সময় অনুযায়ী বিকেল ৪টার মধ্যে সব দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ বলবৎ ছিল। ওইদিন নির্ধারিত সময়ের ৫ঘন্টা পর রাত ৯টায় ভ্রাম্যমান আদালতের নিয়মিত তদারকিতে বের হন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান। এ সময় পাটগ্রাম শহরের রেল ক্রসিংয়ের পাশে হাসেম আলীর দোকান খোলা থাকায় ১হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি সরকারি নিয়ম মেনে বিকেল ৪টার মধ্যে দোকান বন্ধ করার হুঁশিয়ারিও দেয় ভ্রাম্যমান আদালত। এর ৪দিন পর ২৫ জুন আবারও বিকেল ৪টার পর দোকান খোলা রাখেন হাসেম। ওইদিন পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত দোকানের সামনে গেলে দোকান খোলা রেখেই পালিয়ে যান হাসেম। উপায়ন্তর না পেয়ে ওই দোকানে তালা লাগিয়ে আশপাশের মানুষজনকে বলা হয় ওই দোকান যাতে অনুমতি ছাড়া খোলা না হয়। এর পরদিন সকালে আবার তালা ভেঙ্গে দোকান খোলেন হাসেম। অনুমতি ছাড়া তালা ভেঙ্গে দোকান খোলায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে তালা দিয়ে ফিরে যায় ভ্রাম্যমান আদালত।
এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর স্থানীয় সংসদ সদস্য বরাবর ইউএনও’র বিরুদ্ধে ‘হুমকি-ধমকি’ ও ‘জোর করে জরিমানা’ আদায়ের লিখিত অভিযোগ করেন হাসেম।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২দিনই ওই দোকানিকে জেল-জরিমানার হুমকি দিয়ে জোর করে জরিমানা আদায় করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে অভিযোগকারীর বাড়িতে তিন দিন ধরে বক্তব্য নেওয়ার জন্য গেলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি।
এ সময় স্ত্রী আলেয়া বেগম বলেন, ইউএনও স্যারের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে আমার স্বামীর। আমি ও আমার স্বামী বিষয়টি মিমাংশা চাই।
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসেম আলী দোকানপাট বন্ধের সরকারি নির্দেশ না মেনে অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখতেন। রাতে দোকান খোলা রাখায় ভ্রাম্যমান আদালত তাঁকে জরিমানা করেন। জরিমানা করার ৪দিন পর আবারও রাতে ওই দোকান খোলা পায় ভ্রাম্যমান আদালত। তাদের দেখে তিনি ভিতর থেকে শার্টার নামিয়ে ফেলে। শার্টার খুলে তাঁকে ডাক দিলে বাহিরে এসে দৌড় দিয়ে পালিয়ে যান। এ অবস্থায় উপায় না পেয়ে তার দোকানে তালা দেয়। আবার তালা ভেঙ্গে দোকান খোলেন হাসেম। এরপর ভ্রাম্যমান আদালতের পক্ষ থেকে দোকান বন্ধ করেন। অনুমতি ছাড়া দোকান না খোলার কথা বলা হলে এবার এমন ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ অভিযোগ তুলেছে ওই দোকানি।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন কুমার মহন্ত বলেন, বিভিন্ন বাজারে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি না মানা, নির্ধারিত সময়ের পর দোকানপাট খোলাসহ অকারনে আড্ডা দেওয়ার জন্য অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় রাত প্রায় ৯টার সময় শহরের রেল ক্রসিংয়ের পাশে হাসেম আলীর দোকান খোলা থাকে। আমাদের দেখে দোকান থেকে সে পালিয়ে যায়। এর আগে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে রাতে দোকান খোলা রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালত তাঁর জরিমানা করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মশিউর রহমান বলেন, স্থানীয় এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছিল। তাঁকে চাঁদাবাজি করতে নিষেধ ও বিভিন্ন সময় হুঁশিয়ারি প্রদান করায় দোকানিকে ব্যবহার করে এমন মিথ্য ও বানোয়াট অভিযোগ তোলা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক যথাযথভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। কাউকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।